স্টাফ রিপোর্টার, মোঃ শাহজাহান বাশার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত দিয়ে এক গুলিবিদ্ধ ভারতীয় চোরাকারবারী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে। সীমান্তে সক্রিয় একটি আন্তর্জাতিক চোরাকারবারী সিন্ডিকেটের সহায়তায় সে সীমান্ত অতিক্রম করে। বিজিবির গোয়েন্দা নজরদারি ও মাটির তথ্যের ভিত্তিতে তাকে আজ রাজধানী ঢাকার মগবাজার এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে আটক করা হয়েছে।
আটককৃত ব্যক্তি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার বটতলী গ্রামের বাসিন্দা। তার নাম সুজন বর্মন, পিতা মঙ্গল বর্মন। সুজন সীমান্ত পার হওয়ার সময় বিএসএফ বা অপর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সঙ্গে গুলিবিনিময়ে আহত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সে কোনোভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং পরে রাজধানী ঢাকায় এসে চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়।
বিজিবির গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান,বিষয়টি নজরে আসার পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সংশ্লিষ্ট সীমান্ত এলাকার চোরাকারবারী চক্রের গতিবিধি ও চলাচলের উপর নজরদারি বাড়ায়। দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে দ্রুত অনুসন্ধান ও তথ্য যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়। প্রযুক্তিগত নজরদারি এবং মানব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিজিবির একটি বিশেষ টহলদল আজ দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর মগবাজারে অবস্থানরত একটি বেসরকারি হাসপাতালের কেবিনে অভিযান চালিয়ে সুজন বর্মনকে সনাক্ত ও আটক করে।
পুলিশের কাছে হস্তান্তর ও আইনানুগ ব্যবস্থা,আটকের পর সুজন বর্মনকে মগবাজার থানার পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। মগবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, “আমরা বিজিবির কাছ থেকে ভারতীয় নাগরিক সুজন বর্মনকে গ্রহণ করেছি। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তদন্তে তার পেছনে কোনো বড় চক্র জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।”
বিজিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “সীমান্তে চোরাকারবারী চক্র সক্রিয় রয়েছে। তারা শুধু সীমান্তবর্তী এলাকায় নয়, রাজধানীতেও ঘাঁটি গড়ে তুলছে। সুজন বর্মনের অবস্থান চিহ্নিত করা এবং তাকে আটক করতে আমাদের গোয়েন্দা ইউনিট নিরবিচারে কাজ করেছে। এ ধরণের সফলতা আমাদের গোয়েন্দা সক্ষমতারই প্রতিফলন।”
আন্তর্জাতিক চোরাচালান সিন্ডিকেটের সক্রিয়তা,সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, কসবা সীমান্ত দিয়ে মানবপাচার, মাদক এবং অবৈধ অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরণের অপরাধমূলক কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরেই চলমান। ভারত ও বাংলাদেশের কয়েকটি সীমান্ত জেলা জুড়ে সক্রিয় একাধিক চক্র এসব অপরাধ সংগঠনে যুক্ত। সীমান্ত পেরিয়ে আসা ব্যক্তিরা অনেক সময় ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান নেয়।
সুজন বর্মনের আটক হওয়ার ঘটনা সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা। সীমান্ত পেরিয়ে কীভাবে একজন গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ল এবং চিকিৎসা নিতে পারল, তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান ও অনুপ্রবেশ রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিজিবি নিয়মিত টহল এবং প্রযুক্তি নির্ভর নজরদারির পাশাপাশি স্থানীয়দের সহযোগিতাও নিচ্ছে।
সরকারি সূত্র জানায়, সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে আরও উন্নত প্রযুক্তি, ড্রোন ব্যবহার এবং আন্তঃবাহিনী সমন্বয়ে সীমান্তে চোরাচালান রোধে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
গুলিবিদ্ধ ভারতীয় নাগরিক সুজন বর্মনের অনুপ্রবেশ ও রাজধানী পর্যন্ত তার আসা একটি বড় ধরনের নিরাপত্তা ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়। তবে বিজিবির গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক অভিযান এবং সফল আটক অপারেশন একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এখন অপেক্ষা, এই অনুপ্রবেশের পেছনের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতটা সফল হয়।
Leave a Reply